সিলেটে খেলার মাঠে মেলা চায় না উপশহরবাসী

সিলেট উপশহরের খেলার মাঠে মেলা নিয়ে ফের বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে মেলার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন এলাকাবাসী। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, মেলার আয়োজন হলে তারা প্রতিহত করবে। এরই মধ্যে একদফা তারা মেলা তৈরির সরঞ্জাম ফিরিয়ে দিয়েছেন। সিলেটের উপশহর অভিজাত আবাসিক এলাকা। প্রায় অর্ধলাখ বাসিন্দার বসবাস ওই এলাকায়। একমাত্র মাঠে বিকাল হলেই খেলাধুলা করে স্থানীয় শিশু, কিশোররা। এমনকি     হাঁটার জন্য এই মাঠকে ব্যবহার করেন বয়োবৃদ্ধরা। ২০২১ সালে ওই মাঠে এক মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর কয়েক মাস মাঠটি খেলার জন্য অনইট-সুরকির কারণে মাঠ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে এই মাঠ খেলার উপযোগী করা হয়। উপশহরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত সোমবার হঠাৎ করে দেখেন মাঠের ভেতরে ট্রাকযোগে গাড়ি ঢুকেছে। বাঁশসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র মাঠের ভেতরে আনা হচ্ছে। এ সময় এলাকার মানুষ জানতে পারেন মেলা সম্পর্কে। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এ সময় স্থানীয়রা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ শুরু করলে মেলার ইভেন্ট ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সরঞ্জামাদি নিয়ে চলে যান। এরপর থেকে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। খেলার মাঠে মেলার আয়োজনের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বিকালে উপশহরের একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে উপশহরবাসীর এই খেলার মাঠে মেলার অনুমতি অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানায়। কারণ; এখানে মেলা হলে গোটা এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় পথচারী থেকে শুরু করে স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং দু’টি মসজিদের মুসল্লিদের। তাছাড়া আগামী ২১শে জানুয়ারি থেকে এখানে উপশহর স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে মাসব্যাপী নাইট মিনি ফুটবল টুর্নামেন্টও শুরু হচ্ছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে মেলার অনুমতি বাতিল করতে তারা সিলেটের সচেতন সব মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। উশহরের জি ব্লক থেকে আই ব্লক পর্যন্ত রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। শাহজালাল উপশহর কল্যাণ পরিষদ, শাহজালাল উপশহর এলাকাবাসী ও শাহজালাল উপশহর স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন শাহজালাল উপশহর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শফিকুল হক। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এলাকার মানুষ বক্তব্য রাখেন। উপশহর কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমান গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘আয়োজকরা আমাদের নামে জাল একটি অনাপত্তি পত্র তৈরি করে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে থেকেও অনুমতি নেন।’ তিনি জানান, ‘জাল কাগজ সৃজন করায় আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। এ নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের পত্র দিচ্ছি। খেলার মাঠে মেলা হলে মাঠটি পরবর্তীতে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে মেলায় দর্শনার্থীদের কারণে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ কারণে খেলার মাঠে মেলা চান না উপশহরের মানুষ।’ মেলার আয়োজক সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হোসেইন জানিয়েছেন, ‘মাঠের মালিক গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এ কারণে মাসব্যাপী মেলা আয়োজনের অনুমতি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ প্রদান করেছেন। পাশাপাশি সিলেটের প্রশাসনের তরফ থেকে অনুমতি দেয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, আমরা দেশীয় পণ্যশিল্প ও বাণিজ্যমেলার যেহেতু অনুমতি পেয়েছি এ কারণে আয়োজনের প্রস্তুতি চালাচ্ছি। 

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মেলার কার্যক্রম শুরু হবে।’ এদিকে, বিষয়টি নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট সালেহ আহমদ সেলিম। তিনি জানান- ‘মেলা আয়োজনের ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু জানাননি। এলাকার মানুষ বিষয়টি আমাকে অবগত করেছেন। আমরা যারা এলাকার মানুষ আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র দিচ্ছি। তিনি জানান, দু’বছর আগে মেলার আয়োজন হয়েছিল। ওই সময় মাঠকে নষ্ট করে আয়োজকরা চলে গিয়েছিলেন। পরে এলাকার মানুষ সেটিকে খেলার উপযোগী করে তুলেন। তবে মেলার আয়োজনে আওয়ামী লীগের যেসব নেতার নাম প্রচার করা হচ্ছে সেটি সত্য নয়। কেউ কেউ ওদের নাম ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল করতে নাম ব্যবহার করছে বলে জানান তিনি। উপশহর স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি জাকির জানান, এখানে মেলা হলে গোটা এলাকাবাসীকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। মাসব্যাপী ফুটবল টুর্নামেন্টও উদ্বোধন হচ্ছেন ২১শে জানুয়ারি। তিনি তার ক্লাবের সদস্য এবং উপশহরবাসীর পক্ষ থেকে মেলার অনুমতি বাতিলের আহ্বান জানান তিনি।