‘গা ঢাকা’ দিয়েছেন আরাভ খান, দেশে ফেরানোর বহুমুখী তৎপরতা

হঠাৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন দুবাইয়ে পলাতক আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম। নেই সেই পুরোনো দম্ভ। আসছেন না ফেসবুক লাইভে। কথা বলছেন না কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে। সর্বশেষ চার দিন আগে দেশবাসীর কাছে ‘দোয়া চেয়ে’ একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি নিরুদ্দেশ হয়েআইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দুবাইয়ের একাধিক সূত্র বলছে, গ্রেফতার আতঙ্কে এক রকম ‘গা ঢাকা’ দিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক খুনের এই আসামি। এ অবস্থার মধ্যেই ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় নাম উঠেছে আরাভের। তার ভারতের পাসপোর্ট বাতিল করে দেশে ফেরাতে কাজ করছে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।

শুক্রবার ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশের তালিকায় রবিউল ইসলামের নাম দেখা গেছে। বাংলাদেশের অনুরোধে এই নোটিশ জারি করা হয়েছে। এতে তার ছবি, লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্মতারিখ, বয়স, জাতীয়তা ও অভিযোগের তথ্য রয়েছে। জাতীয়তা হিসেবে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশি’। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসেবে লেখা আছে মার্ডার (হত্যা)। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় এখন রবিউলসহ মোট ৬৩ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। রবিউল ওরফে আরাভ খানই এই তালিকার সর্বশেষ ব্যক্তি।

এদিকে আরাভ খানের নিরুদ্দেশ হওয়ার পেছনে সঠিক কারণ বলতে পারছে না কেউ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আরাভ। সেখানে তিনি লেখেন, ‘প্রিয় দেশবাসী আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন সহায় হন।’ এরপর থেকে ফেসবুক ওয়ালে তার কোনো পোস্ট দেখা যায়নি। দুবাইয়ের অনেকে বলছেন, আরাভ খান ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারির খবরে গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। দুবাইয়ে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। 

আরাভের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তিনি এখন বাসাতেই অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পলাতক আরাভ খান নজরদারিতে আছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনে পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার চার্জশিটে দেওয়া নামেই রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়। পরে ইন্টারপোল তা গ্রহণ করে। তবে এই নোটিশের মানে গ্রেফতারি পরোয়ানা নয়। এ ছাড়া ইন্টারপোল আসামিকে গ্রেফতারে কোনো দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বাধ্য করতে পারে না। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তাকে দেশে ফেরাতে কাজ চলছে।

দুবাইয়ে পলাতক আরও বেশ কয়েক আসামিকে দেশে ফেরাতে সাফল্য দেখাতে না পারায় রেড নোটিশ জারির পরও আরাভকে ফেরানো নিয়ে নানা শঙ্কা রয়েছে। আরাভ যেহেতু ভারতীয় পাসপোর্টধারী, তাই তাকে কিভাবে ফেরানো হবে তা নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে রবিউলের আরাভ খান নামের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের। এটি করা গেলে তাকে দেশে ফেরানো সহজ হবে বলে মনে করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলেও চলছে যোগাযোগ।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। এই হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। ২০২০ সালে রবিউল ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরাভ খান হিসেবে উল্লে­খ করা হয়। এই পাসপোর্ট দিয়েই তিনি দুবাইয়ে পাড়ি জমান। আয়ের কোনো দৃশ্যমান উৎস না থাকা সত্ত্বেও বড় পরিসরে শুরু করেন স্বর্ণ ব্যবসা। ১৫ মার্চ দুবাইয়ে তার মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ দেশের অনেক তারকা অংশ নিয়েছিলেন। পরে জানা যায় আরাভ খুনের মামলার আসামি।

পুলিশ পরিদর্শক খুনের পর রবিউল ওরফে আরাভ তার নামে একজনকে আত্মসমর্পণের জন্য ভাড়া করেছিলেন। ভাড়া করা ওই ব্যক্তি আত্মসমর্পণের পর ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিউল এই মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮নং আসামি। মামলাটি এখন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।