চিঠির জবাব দেয়নি পুলিশ, বাধ্য হয়ে তালা ভেঙেছি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র আন্দোলন চলতেই থাকবে। এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার নয়, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের। ‘দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে ফের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। বিএনপি এখন কি করবে?’ মানবজমিনের এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ উক্ত মন্তব্য করে বলেন, প্রায় দুইশো বছর ধরে বৃটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধিকার আন্দোলন চলেছে। দীর্ঘ ২৪ বছর পর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের এই আন্দোলনও চলবে। ফ্যাসিবাদ থেকে, একদলীয় শাসন থেকে মুক্ত হতে হয়তো সময় লাগতে পারে; কিন্তু বিজয় আমাদের নিশ্চিত।

কেউ কেউ বলছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে গিয়ে- বিএনপি শেষ হয়ে গেছে, বিএনপি দেশে-বিদেশেও বন্ধুহীন হয়ে গেছে। তবে, এ কথা মানতে একেবারেই নারাজ বিএনপি’র দপ্তরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত রিজভী আহমেদ। বললেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে যায় নি। বিএনপি বন্ধুহীন নয়। দেশের বেশির ভাগ জনগণের সমর্থন আমাদের সঙ্গে। শুধু গণতান্ত্রিক দেশসমূহই নয়, আন্তর্জাতিক অনেক অধিকার গোষ্ঠী আর বিভিন্ন সংস্থাও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপি’র দাবির প্রতি সংহতি পোষণ করেছে। ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়াসহ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করা দেশগুলো কখনো কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার মেনে নেবে না। আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো বলেনি যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি ঠিক নয়! আমরা যৌক্তিক কারণেই নির্বাচনে অংশ নিইনি। ভুলে গেলে চলবে না, এরশাদের আমলে ‘কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় বেইমান হবে’ বলে আওয়ামী লীগ নিজেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এরশাদের পতনের পর সত্যিকারের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি জয়ী হয়েছিল। তাই মানুষ বলে, বিএনপি যা বলে তা-ই করে, আওয়ামী লীগের আদর্শের বালাই নেই। সত্যিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে কে জিতবে বলতে পারবো না, কিন্তু আওয়ামী লীগ যে জিতবে না সেটা নিশ্চিত।অনেকে মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরেই নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে বিএনপি। বিশেষ করে যখন দলের চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে এটা কোনো সমস্যাই নয় বলে মনে করেন দলটির ছাত্র সংগঠন- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিজভী আহমেদ, ‘আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে কিনা করেছেন! এরশাদের আমল থেকে শুরু করে, ওয়ান ইলেভেন, অতঃপর শেখ হাসিনার নিষ্ঠুর নির্যাতন। বর্তমানে রাষ্ট্রযন্ত্র সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। অবৈধ কর্তৃপক্ষ নিপীড়কের ভূমিকায় যেমন খুশি অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে আসলেও শেখ হাসিনার নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হবেন। তবে, প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে তিনি তৃণমূলের একেবারে সাধারণ কর্মীর সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।’


সম্প্রতি বিএনপি অফিসে তালা ভেঙে আপনার প্রবেশ নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, নিজেদের লাগানো তালা নিজেরা ভেঙে আপনারা অফিসে ঢুকেছেন, নাটক করেছেন...। জবাবে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘পার্টি অফিস অন্যায়ভাবে অচল করে দেয়ার ঘটনা এটাই নতুন ছিল না। এর আগেও অনেকবার হয়েছে। পুলিশ আমাদের অফিসে ঢুকে তিনতলার দরজা ভেঙে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। এবারো আমাদের বিশাল সমাবেশে তাণ্ডব চালিয়ে তারপর সবার সামনে পুলিশ প্রধান ফটকের সামনে ‘ক্রাইম সিন’ লেখা ফিতা টানিয়ে দেয়। যেখানে অফিসে একজন স্টাফও থাকতে পারেনি, সেখানে তালা দিলো কে? পুলিশই অবৈধভাবে তালা দিয়েছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে অফিসে ঢোকার ঘোষণা দিয়ে পুলিশকে চিঠি দিই। তারা এর জবাব দেয়নি। তখন আমরা বাধ্য হয়েছি তালা ভাঙতে। তালা ভেঙে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নিজেদের অফিসে ঢোকার পর ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচনের অপবাদ ঢাকার জন্য আওয়ামী লীগ এখন প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। স্টাফদেরও কথামতো চলতে হুমকি দিয়েছে পুলিশ। তালা দিয়েছে হয় র‍্যাব, নয়তো পুলিশ। তারা ভেবেছিল, বিএনপি অফিস তালাবদ্ধ রেখে সেটা দখলে নেয়ার চেষ্টা করবে।’