ইনজেক্টেবল স্যালাইনের সংকট, বিপাকে রোগী

যশোরে ইনজেক্টেবল স্যালাইন সরবরাহে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দেড় মাস ধরে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য স্যালাইন সরবরাহ নিশ্চিত করা হলেও অন্য রোগীরা ঠিকমতো পাচ্ছেন না। খোলাবাজারে তাদের স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের রোগীরাও ছুটছেন বাইরের ফার্মেসিতে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সংকট প্রকট হফার্মেসি সংশ্লিষ্টদের দাবি, স্যালাইনের চাহিদার ১০ শতাংশ সরবরাহ হচ্ছে না। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা চড়া দামে বিক্রি করছেন। সংকটের অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা দুই থেকে তিন গুণ দামে স্যালাইন বিক্রি করছে। স্বজনরা জানান, দোকানের পর দোকান ঘুরেও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। চরম ভোগান্তির শিকার মুমূর্ষু ও সার্জারির রোগীরা। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।

যশোর শহরের জেনারেল হাসপাতাল মোড়ে বাঘারপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, তার স্ত্রী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। শুক্রবার বিকাল থেকে স্যালাইন খুঁজছি। শহরের ওষুধের দোকানগুলো তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। কোথাও পাইনি। শনিবার দুপুরে হাসপাতাল মোড়ের একটি দোকানে পেয়েছি। কিছু আগেই তারা সাপ্লাই পেয়েছে।

আরেক রোগীর স্বজন চৌগাছার টেঙ্গুরপুর এলাকার বাসিন্দা শাহিন হোসেন বলেন, তার ভগ্নিপতি সদর হাসপাতালে ভর্তি। সকাল থেকে অন্তত ১০টি ফার্মেসি ঘুরেছি, কোথাও স্যালাইন মেলেনি। শুক্রবার নরমাল স্যালাইন (এনএস) একটি কিনেছি ২৬০ টাকায়। বাজার দর ১০০ টাকার কম। দোকানদার জানায়-বেশি দামে কিনেছি সেজন্য বেশি দামে বিক্রি করছি। স্বজনরা ইনজেক্টবল স্যালাইন সংগ্রহ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় স্যালাইন সরবরাহ অপ্রতুল। সীমিত সরবরাহের স্যালাইন দিয়ে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোগীকে বিনামূল্যের স্যালাইন দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অপর দিকে, বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জন্যও স্যালাইনে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলায় চাহিদার তুলনায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের মতো স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। বাজারে পাঁচ প্রকার ইনজেক্টেবল স্যালাইন এইচএস, ডিএনএ, ডিএ, এনএস ও সিএস’র চাহিদা বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ চাহিদা নরমাল স্যালাইনের (এনএস)। স্যালাইনের সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য ১০১ টাকা হলেও সংকটের অজুহাতে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

হাসপাতাল মোড়ের জোয়ারদার ফার্মেসির বিক্রয়কর্মী মাসুদুর রহমান বলেন, বাজারে স্যালাইনের সংকট রয়েছে। একটি ফার্মেসিতে সব রকমের স্যালাইন নেই। একটি ফার্মেসিতে এক প্রকার পাবেন, তো আর চার প্রকার নেই। ফলে রোগীর চাহিদা অনুসারী স্যালাইন খুঁজতে স্বজনরা দোকান ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হচ্ছে।

আরেক বিক্রয়কর্মী আবদুল গফ্ফার বলেন, বাজারে পাঁচটি কোম্পানির স্যালাইন সরবরাহ বেশি হয়। দেড় মাস হলো কোম্পানিগুলো বাজারের চাহিদামতো সরবরাহ করতে পারছে না।

শহরের হাসপাতাল মোড়ের নিপু ড্রাগ হাউজের স্বত্বাধিকারী আহসান হাবীব নিপু বলেন, ইনজেক্টেবল স্যালাইন মানুষের জীবন রক্ষার অন্যতম ওষুধ। এ স্যালাইনের দেড় মাস ধরে সংকট। কোম্পানির লোকেরা বলছেন-স্যালাইন তৈরির কাঁচামাল সংকটে উৎপাদন কম হচ্ছে। এজন্য বাজারে সরবরাহও কমেছে। এ বিষয়ে যশোর জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আবদুস শহীদ চাকলাদার পান্নু বলেন, বাজারে চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি স্যালাইন সরবরাহ করে। তারা চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ করতে পারছে না। বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা নরমাল স্যালাইনের। কিন্তু সরবরাহ খুব কম। আমরা কোম্পানিকে চাপ দিচ্ছি। তারা দুই-তিনটার বেশি স্যালাইন দিতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি ও কৃত্রিম সংকট বন্ধে সমিতির পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করছি। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, সরকারি হাসপাতালে স্যালাইনের সংকটের তথ্য জানা নেই। এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেব। তবে খোলাবাজারে স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট থাকতে পারে। ওষুধ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজার মনিটরিং করা হবে। কারও বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।